বাংলাদেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং বিস্তারিত



বাংলাদেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং বিস্তারিত 

পরিচিতি: বাংলাদেশের পুরো নাম ইংরেজিতে হলো People's Republic of Bangladesh (পিপলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ), যা দেশের সাংবিধানিক ও আনুষ্ঠানিক নাম এবং এর অর্থ 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ'। 

পূর্ণরূপ: People's Republic of Bangladesh

বাংলায়: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ

আয়তন: ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের আয়তন বিভিন্ন উৎস অনুযায়ী প্রায় ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার (ভূমি) থেকে ১,৪৮,৪৬০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখানো হয়, তবে ছিটমহল বিনিময়ের পর আয়তন বেড়ে ১,৪৭,৬১০ বর্গ কিলোমিটার (বিবিএস) বা প্রায় ১,৪৯,২১০ বর্গ কিলোমিটার (সম্ভাব্য) পর্যন্ত ধরা হয়, যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং অন্যান্য বৈশ্বিক তথ্যের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা নির্দেশ করে। 

মূল তথ্য:

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অনুযায়ী: ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিমি (ভূমি)। 

অন্যান্য সূত্র/সম্ভাব্য আয়তন: ১,৪৮,৪৬০ বর্গ কিমি (BBC, CIA World Factbook)। 

ছিটমহল বিনিময়ের পর: ১,৪৭,৬১০ বর্গ কিমি। 

পানি সহ মোট: প্রায় ১,৪৯,২১০ বর্গ কিমি পর্যন্ত ধরা হয়।

সুতরাং, আপনি কোন উৎস থেকে তথ্য নিচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে আয়তনের এই সামান্য পার্থক্য দেখা যায়, তবে ১,৪৭,৫৭০ বা ১,৪৮,৪৬০ বর্গ কিলোমিটার সংখ্যা দুটিই প্রচলিত। 

ভৌগোলিক অবস্থান: বাংলাদেশ - সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়, পূর্ব সীমান্তে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মিয়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্য এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহভাগ অঞ্চলজুড়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড। নদীমাতৃক দেশটির ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য ‘সুন্দরবন’ এবং দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সৈকত ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত’ বাংলাদেশে অবস্থিত। জনসংখ্যায় বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ, যদিও আয়তনে বিশ্বে ৯২তম।  

লক্ষ্যমাত্রা: বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অগ্রগতি উদাহরণ দেওয়ার মতোই। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক বেশির ভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়াকে। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা ও বিমসটেক-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাংলাদেশ জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব শুল্ক সংস্থা, কমনওয়েলথ অফ নেশনস, উন্নয়নশীল আটটি দেশ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন, ওআইসি প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংঘের সক্রিয় সদস্য।

বাংলাদেশের বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিং:

বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে আছে; যেমন, জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে ৮ম, ফিফা র‍্যাংকিংয়ে (২০২৫ অনুযায়ী) ১৮৩তম, এবং সুখী দেশের তালিকায় (২০২৫ অনুযায়ী) ১৩৪তম অবস্থানে রয়েছে, তবে শক্তিশালী দেশগুলোর তালিকায় ৪৭তম স্থানে আছে। 

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান:

জনসংখ্যা: বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ (১৭ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা)।

ফিফা র‍্যাংকিং (ফুটবল): ১৮৩তম (অক্টোবর ২০২৫)।

সুখী দেশেলর তালিকা: ১৩৪তম (মার্চ ২০২৫)।

শক্তিশালী দেশ: ৪৭তম (২০২৫)।

দেশের কোড: আন্তর্জাতিক ফোন কল করার জন্য বাংলাদেশের কোড হলো +880। 

বাংলাদেশের গ্রামের সংখ্যা কত?

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে ৮৭,১৯১ টি গ্রাম রয়েছে, তবে বিভিন্ন উৎসে সামান্য ভিন্ন সংখ্যা দেখা যায়, যেমন ৮৭,৩৭২ বা ৮৭,৩১৯ টি; গ্রামের সংখ্যা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। 

জনশুমারি (২০১১): ৮৭,১৯১ টি গ্রাম

অন্যান্য উৎস: ৮৭,৩৭২ বা ৮৭,৩১৯ টি

এই সংখ্যাগুলো সরকারি আদমশুমারি বা বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে এবং এটি একটি আনুমানিক হিসাব।

কিছু অর্জন:

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

২০১৮ সালের ১২ মে, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপন করা হয়।

উৎক্ষেপন কেন্দ্র: যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার।

প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান: থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস কোম্পানি (ফ্রান্স)।

উৎক্ষেপিত রকেট: স্পেসএক্সের “ফ্যালকন ৯”।স্যাটেলাইটটির ওজন: ৩.৭টন।স্যাটেলাইটটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ১৫ বছর। মোট খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। অরবিটাল স্লট কেনা হয়েছে রাশিয়ার ইন্টার স্পুটনিকের কাছ থেকে।

বাংলাদেশের ভূ-কেন্দ্র: গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায়।

ভারতের সাথে ছিটমহল বিনিময়:

ছিটমহল বিনিময় কার্যকর হয়: ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে। বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হলো।

ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলো।

বাংলাদেশের ভাগে অন্তর্ভুক্তি- ১৭,১৬০ একর জায়গা। ভারতের ভাগে অন্তর্ভুক্তি – ৭১১০ একর জায়গা।

ইউনেস্কো কর্তৃক ৭ই মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি

ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণকে “ডকুমেন্টারি হেরিটেজ” (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

স্বীকৃতি প্রদানের তারিখ: ৩০ অক্টোবর, ২০১৭।

এই ভাষণটিসহ মোট ৭৭টি গুরুত্বপূর্ণ নথিকে একইসাথে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

“মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে (এমওডব্লিউ)” ৭ মার্চের ভাষণসহ এখন পর্যন্ত ৪২৭টি গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগৃহীত হয়েছে।

বাংলাদেশের সমুদ্রজয়:

সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রায় দেয়- International Tribunal for the Law of the Sea (ITLOS)

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রায় প্রদানের তারিখ: ১৪ মার্চ, ২০১২ সাল।

ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে PCA (Permanent Court of Arbitration) রায় দেয় ৭ জুলাই, ২০১৪ সালে।

জাতিসংঘের কনভেনশন অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজনৈতিক সীমা হচ্ছে ভিত্তি রেখা থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল।

পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম- পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।

পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য- ৬.১৫ কিলোমিটার।

সেতুতে রেলপথ সংযুক্তির সিদ্ধান্ত হয়- ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি।

পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়- ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে।

মোট স্প্যান- ৪১টি।

পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়- ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।

সর্বশেষ স্প্যান বসানো হয়- ১০ ডিসেম্বর, ২০২০।

পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা- ৪২টি।

রাজধানী ঢাকার সাথে সংযোগ স্থাপন করবে- দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার।

মেট্রোরেল

প্রকল্পের নাম- Dhaka Mass Rapid Transit Development Project (DMRDP)।

বাস্তবায়নকারী সংস্থা- Dhaka Mass Transit Company Ltd।

একনেকে অনুমোদন- ১৮ ডিসেম্বর, ২০১২।

সরকারের সংশোধিত মেট্রোরেল সম্পর্কিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা জুড়ে ১৩১ কিলোমিটার এলাকায় মেট্রোরেল সংযোগ স্থাপিত হবে। এরমধ্যে MRT- 6 প্রকল্পটি নির্মাণাধীন রয়েছে এবং বাকি প্রকল্পগুলো পরিকল্পনাধীন রয়েছে।

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব:

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসংখ্য গুণী ব্যক্তিত্বের অবদানে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হয়েছে। তাঁদের কৃতিত্ব দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃতি পেয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের উদাহরণ:

রাজনীতি ও রাষ্ট্রনায়ক:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: স্বাধীনতার ঘোষক এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

চার জাতীয় নেতা: সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী, এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান।

বিশিষ্ট এবং স্বরণীয় নেতৃবৃন্দ: হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।

মুক্তিযুদ্ধ: সাত বীরশ্রেষ্ঠ: ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান, সিপাহী হামিদুর রহমান, ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ, সিপাহী মোস্তফা কামাল, ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার রুহুল আমিন, ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ।

অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা: জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানী (মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক), সেক্টর কমান্ডারগণ (যেমন: মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর কে. এম. শফিউল্লাহ)।

বিজ্ঞান ও শিক্ষা:

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু: বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী, গাছের প্রাণ আছে তত্ত্বের আবিষ্কারক।

ড. কুদরাত-এ-খুদা: প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী, প্রথম শিক্ষা কমিশনের প্রধান।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ: ভাষাবিদ ও জ্ঞানতাপস।

ড. জামাল নজরুল ইসলাম: বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতবিদ।

ড. মাকসুদুল আলম: পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী বিজ্ঞানী।

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক: প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় অধ্যাপক।


শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি:

কবি ও লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (নোবেল বিজয়ী), কাজী নজরুল ইসলাম (জাতীয় কবি), জসীম উদ্‌দীন (পল্লীকবি), জীবনানন্দ দাশ (রূপসী বাংলার কবি), বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (নারী জাগরণের অগ্রদূত), সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, হুমায়ূন আহমেদ (জনপ্রিয়তম কথাসাহিত্যিক)।


শিল্পী: জয়নুল আবেদীন (শিল্পাচার্য), এস. এম. সুলতান, কামরুল হাসান, হামিদুর রহমান (কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশাকার)।

সংগীত: আব্বাসউদ্দীন আহমদ, আবদুল আলীম, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, আইয়ুব বাচ্চু।

সমাজসেবা ও অর্থনীতি:

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী (২০০৬)।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ: বিশ্বের বৃহত্তম এনজিও 'ব্র্যাক'-এর প্রতিষ্ঠাতা।

জাতীয় পুরস্কার

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বেশ কিছু সম্মানজনক পুরস্কার প্রদান করা হয়।

প্রধান জাতীয় পুরস্কারসমূহের উদাহরণ-

বীরত্বসূচক খেতাব (Gallantry Awards): মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য এই খেতাবগুলো প্রদান করা হয়।

বীরশ্রেষ্ঠ (সর্বোচ্চ): ৭ জন।

বীরউত্তম: ৬৮ জন।

বীরবিক্রম: ১৭৫ জন।

বীরপ্রতীক: ৪২৬ জন।

বেসামরিক পুরস্কার (Civilian Awards):

স্বাধীনতা পুরস্কার বা স্বাধীনতা পদক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পুরস্কার। ১৯৭৭ সাল থেকে প্রদান করা হচ্ছে। ক্ষেত্র: স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজসেবা ইত্যাদি।

একুশে পদক: দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পুরস্কার। ১৯৭৬ সাল থেকে প্রদান করা হচ্ছে। ক্ষেত্র: ভাষা আন্দোলন, শিল্পকলা, শিক্ষা, গবেষণা, সাংবাদিকতা, সমাজসেবা ইত্যাদি।

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার: বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। ১৯৫৫ সালে প্রবর্তিত।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য প্রদত্ত সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।

গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসমূহ

বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা।

স্থাপনা (Establishments)

জাতীয় স্মৃতিসৌধ: সাভারে অবস্থিত, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত। স্থপতি: সৈয়দ মাইনুল হোসেন।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে নির্মিত। স্থপতি: হামিদুর রহমান।

জাতীয় সংসদ ভবন: বিশ্বের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন আইনসভা ভবন। স্থপতি: লুই আই. কান।

পদ্মা বহুমুখী সেতু: দেশের দীর্ঘতম সেতু (৬.১৫ কিমি), যা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে।

কর্ণফুলী টানেল: কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল।

ঢাকা মেট্রোরেল: দেশের প্রথম এলিভেটেড নগর রেল ব্যবস্থা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার (সোমপুর বিহার): নওগাঁয় অবস্থিত, ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।

ষাট গম্বুজ মসজিদ: বাগেরহাটে অবস্থিত, ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।

প্রতিষ্ঠান (Institutions)

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), নির্বাচন কমিশন, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (BJRI), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BINA)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান: বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ।

আর্থিক ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিকল্পনা কমিশন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA)।

ক্রীড়া, চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যম

এই খাতগুলো দেশের সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক্রীড়াঙ্গন (Sports)

ক্রিকেট: দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা।

প্রধান অর্জন: আইসিসি ট্রফি জয় (১৯৯৭), টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ (২০০০), বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে পরাজিত করা, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলা (২০১৭), অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় (২০২০)।

বিখ্যাত খেলোয়াড়: সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল।

ফুটবল: সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় (২০০৩), সাম্প্রতিক সময়ে নারী ফুটবলে অভূতপূর্ব সাফল্য (সাফ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ জয়)।

দাবা: নিয়াজ মোর্শেদ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার (১৯৮৭)।

শুটিং: আসিফ হোসেন খান কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক জয় (২০০২)।

আর্চারি: রোমান সানা আর্চারি বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জ পদক জয় এবং অলিম্পিকে সরাসরি অংশগ্রহণ।

চলচ্চিত্র (Film)

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: তারেক মাসুদের 'মাটির ময়না' (২০০২) কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়।

গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রকার: জহির রায়হান, আলমগীর কবির, ঋত্বিক ঘটক, তারেক মাসুদ।

পুরস্কার: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।


গণমাধ্যম (Media)

সংবাদপত্র: প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, ইত্তেফাক, The Daily Star, The Financial Express ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

টেলিভিশন: সরকারি টেলিভিশন 'বাংলাদেশ টেলিভিশন' (বিটিভি) এবং প্রায় ৩০টিরও বেশি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল।

অনলাইন গণমাধ্যম: bdnews24.com, banglanews24.com ইত্যাদি

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url